এখান একটি প্রশ্ন দেখা দেয়, যদি কোন ব্যক্তি কোন বিষয়ে কসম খেয়ে বসে তারপর সে জানতে পারতো এতে কোন কল্যাণ নেই এবং এর ফলে কসম ভেঙ্গে ফেলে যে বিষয়ে কল্যাণ আছে তা অবলম্বন করে, তাহলে এক্ষেত্রে তাকে কসম ভাঙ্গার কাফ্ফারা আদায় করতে হবে কি না। এক দল ফকীহ বলেন, কল্যাণের পথ অবলম্বন করাই কাফ্ফারা, এছাড়া আর কোন কাফ্ফারার প্রয়োজন নেই। তারা এ আয়াত থেকে যুক্তি দিয়ে থাকেন যে, আল্লাহ হযরত আবু বকরকে কসম ভেঙ্গে ফেলার হুকুম দেন এবং কাফ্ফারা আদায় করার হুকুম দেননি। এছাড়া নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিম্নোক্ত উক্তিটিকেও তারা যুক্তি হিসেবে পেশ করেনঃ
مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ فرَأَى غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا فَلْيَأْتِ الَّذِي هُوَ خَيْرٌ وَذَالِك كَفَّارتُهُ-
“যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে কসম খেয়ে বসে তারপর সে জানতে পারে অন্য বিষয়টি তার চেয়ে ভালো, এ অবস্থায় তার ভালো বিষয়টি গ্রহণ করা উচিত এবং এই ভালো বিষয়টি গ্রহণ করাই তার কাফ্ফারা।”
অন্য দলটি বলেন, কসম ভাঙ্গার জন্য আল্লাহ কুরআন মজীদে একটি পরিষ্কার ও স্বতন্ত্র হুকুম নাযিল করেছেন (আল বাকারাহ ২২৫ ও আল মায়েদাহ ৮৯ আয়াত)। এ আয়াতটা ঐ হুকুম রহিত করেনি এবং পরিষ্কারভাব এর মধ্যে কোন সংশোধনও করেনি। কাজেই ঐ হুকুম স্বস্থানে অপরিবর্তিত রয়েছে। আল্লাহ এখানে হযরত আবু বকরকে অবশ্যি কসম ভেঙ্গে ফেলতে বলেছেন কিন্তু তাঁকে তো এ কথা বলেননি যে, তোমার ওপর কোন কাফ্ফারা ওয়াজিব নয়। আর নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের উক্তিটির অর্থ হচ্ছে, শুধু এই যে, একটি ভুল ও অসঙ্গত বিষয়ের কসম খেয়ে ফেললে যে গুনাহ হয় সঠিক ও সঙ্গত পন্থা অবলম্বন তার অপনোদন হয়ে যায়। কসমের কাফ্ফারা রহিত করা এর উদ্দেশ্য নয়। বস্তুতঃ অন্য একটি হাদীস-এর ব্যাখ্যা করে দেয়। তাতে নবী করীম ﷺ বলেনঃ
مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ فرَأَى غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا فَلْيَأْتِ الَّذِي هُوَ خَيْرٌ , وَلْيُكَفِّرْ عَنْ يَمِينِهِ-
“যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে কসম খেয়ে বসে তারপর সে জানতে পারে অন্য বিষয় তার চেয়ে ভালো, তার যে বিষয়টি ভালো সেটিই করা উচিত এবং নিজের কসমের কাফ্ফারা আদায় করা উচিত।”
এ থেকে জানা যায়, কসম ভাঙ্গার কাফ্ফারা আলাদা জিনিস এবং ভালো কাজ না করার গোনাহের কাফ্ফারা অন্য জিনিস। ভালো কাজ করা হচ্ছে একটি জিনিসের কাফ্ফারা এবং দ্বিতীয় জিনিসের কাফ্ফারা কুরআন নিজেই নির্ধারিত করে দিয়েছে। (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা সা’দের ব্যাখ্যা, ৪৬ টীকা)।