وَكَيْفَ يُحَكِّمُونَكَ وَعِندَهُمُ ٱلتَّوْرَىٰةُ فِيهَا حُكْمُ ٱللَّهِ ثُمَّ يَتَوَلَّوْنَ مِنۢ بَعْدِ ذَٰلِكَ ۚ وَمَآ أُو۟لَـٰٓئِكَ بِٱلْمُؤْمِنِينَ
আর এরা ৭০ তোমাকে কিভাবে বিচারক মানছে যখন এদের কাছে তাওরাত রয়ে গেছে, যাতে আল্লাহর হুকুম লিখিত আছে আর তারপরও এরা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে? ৭১ আসলে এরা ঈমানই রাখে না।
৭০
ইহুদীরা তখনো পর্যন্ত ইসলামী রাষ্ট্রের নিয়মিত প্রজা হিসেবে গণ্য হয়নি। বরং সন্ধি ও চুক্তির ভিত্তিতে ইসলামী রাষ্ট্রের সাথে তাদের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এ চুক্তিগুলোর প্রেক্ষিতে ইহুদীরা তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়সমূহে স্বাধীনতা ভোগ করতো এবং তাদের মামলার ফায়সালা তাদের আইন অনুযায়ীই তাদের নিজেদের বিচারপতিরাই করতো। নবী ﷺ বা তাঁর নিযুক্ত বিচারপতিদের কাছে নিজেদের মামলা-মোকদ্দমা আনার ব্যাপারে আইনের দিক দিয়ে তারা বাধ্য ছিল না। কিন্তু যেসব ব্যাপারে তারা নিজেদের দর্শীয় আইন অনুযায়ী ফায়সালা করতে চাইতো না যেসব ব্যাপারে ফায়সালা করার জন্য তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসতো। তারা আশা করতো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শরীয়াতে হয়তো তাদের জন্য অন্য কোন বিধান আছে এবং এভাবে নিজেদের ধর্মীয় আইনের আনুগত্য করা থেকে তারা নিষ্কৃতি লাভ করতে পারবে।
এখানে বিশেষ করে যে মামলাটির দিকে ইশারা করা হয়েছে সেটি ছিল খয়বরের সম্ভ্রান্ত ইহুদী পরিবার সংক্রান্ত। এ পরিবারগুলোর এক মহিলার সাথে এক পুরুষের অবৈধ সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছিল। তাওরাতের বিদান অনুসারে তাদের শাস্তি ছিল ‘রজম’ অর্থাৎ উভয়কে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা। (দ্বিতীয় বিবরণী পুস্তক ২২: ২৩-২৪) কিন্তু ইহুদীরা এ শাস্তি প্রয়োগ করতে চাচ্ছিল না। তাই তারা পারস্পরিক পরামর্শক্রমে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শালিস মানার সিদ্ধান্ত করলো এবং একথাও স্থির করলো যে, যদি তিনি রজম ছাড়া অন্য কোন হুকুম দেন তাহলে তা নেয়া হবে আর যদি রজমেরই হুকুম দেন তাহলে তা মানা হবে না। কাজেই রসূলের সামনে মামলা পেশ করা হলো। তিনি রজমের হুকুম দিলেন। তারা এ হুকুম মানতে অস্বীকার করলো। তখন রসূল ﷺ তাদের জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের ধর্মে এর শাস্তির ব্যাপারে কি বিধান আছে? তারা জবাব দিলঃ বেত্রাঘাত করা এবং মুখে কালি মাখিয়ে গাধার পিঠে চড়িয়ে প্রদক্ষিণ করানো। তিনি তাদের আলেমদেরকে কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ বিবাহিত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর ব্যাপারে তাওরাতে কি এ বিধানই আছে? তারা আবার সেই মিথ্যা জবাব দিলেন। কিন্তু তাদের মধ্য থেকে একজন নীরব থাকলেন। তার নাম ছিল ইবনে সূরিয়া। ইহুদীদের বর্ণনা অনুযায়ী সে সময় তাওরাতের তার চেয়ে বড় আলেম আর দ্বিতীয় কেউ ছিল না। নবী ﷺ তাকে সম্বোধন করে বললেনঃ আমি তোমাকে সেই আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি যিনি তোমাদের বাঁচিয়েছিলেন ফেরাউনের কবল থেকে এবং তুর পাহাড়ে তোমাদের শরীয়াত দান করেছিলেন, সত্যিই কি তাওরাতে ব্যভিচারের জন্য এ শাস্তির বিধান আছে? ইবনে সূরিয়া জবাব দিলেনঃ “আপনি আমাকে এ ধরনের কঠিন কসম না দিলে আমি বলতাম না। প্রকৃতপক্ষে রজমই ব্যভিচারের শাস্তি। কিন্তু আমাদের এখানে যখন ব্যভিচার বেড়ে যেতে লাগলো তখন আমাদের শাসকরা এ রীতি অবলম্বন করলো যে, কোন বড় লোক ব্যভিচার করলে তাকে ছেড়ে দিতো এবং গরীবরা এ দুষ্কর্ম করলে তাদেরকে রজম করতো। তারপর এতে যখন জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলো তখন আমরা তাওরাতের আইনের মধ্যে পরিবর্তন সাধন করে ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীকে বেত্রাঘাত করার এবং তাদের মুখে কালি দিয়ে উল্টো মুখে গাধার পিঠে চড়াবার শাস্তির বিধান দিলাম।” এরপর ইহুদীদের আর কিছু বলার অবকাশ রইলো না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশে ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীকে পাথর নিক্ষেপ করে মেরে ফেলা হলো।
৭১
এ আয়াতে আল্লাহ ইহুদীদের দুর্নীতির মুখোস পুরোপুরি উন্মোচন করে দিয়েছেন। এ “ধর্মীয় লোকেরা” সারা আরবে এরূপ প্রচারণার জাল বিস্তার করে রেখেছিল যে, ঐ সামজে দ্বীনদারী ও “কিতাবী-জ্ঞানের” ব্যাপারে তাদের কোন জুড়ি নেই। এদের অবস্থা এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছিল যে, যে কিতাবকে তারা নিজেরা আল্লাহর কিতাব বলে মানতো এবং তারা যার প্রতি ঈমান রাখে বলে দাবী করতো, তার বিধান পরিহার করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিজেদের মামলা নিয়ে এসেছিল। অথচ তাঁকে নবী বলে মেনে নিতেও তারা কঠোরভাবে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। এ থেকে একথা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, এ ইহুদীরা আসলে কোন জিনিসের ওপরই যথার্থ ঈমান রাখতো না। আসলে তাদের ঈমান ছিল নিজেদের নফস ও প্রবৃত্তির ওপর। আল্লাহর কিতাব বলে তারা যাকে মানে তার নির্দেশ তাদের নফস ও প্রবৃত্তির কাছে অপছন্দনীয় বলেই তারা তাকে মানতে অস্বীকার করে। আর (নাউযুবিল্লাহ) যাকে তারা মিথ্যা নবুওয়াতের দাবীদার বলে প্রচার করে বেড়ায় সেখান থেকে নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী কোন ফায়সালা লাভ করা যায় কিনা কেবলমাত্র এ আশায় তার কাছে ধর্ণা দেয়।